জনবিতর্ক, ভারত প্রশ্ন

অর্ক ভাদুড়ি

ভারতের বাংলাদেশ সংকট: সমস্যা আসলে আধিপত্যবাদী চশমার

September 27, 2024   2 comments   2:05 am

এই মুহূর্তে ভারতের কোনও বন্ধু দেশ নেই৷ ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়ে মালদ্বীপের ক্ষমতায় এসেছে একটি রাজনৈতিক দল। ভারত ঘনিষ্ঠ নেতা পুষ্পকুমার দহল ওরফে প্রচণ্ড নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন। শ্রীলঙ্কাতেও ভারত বিরোধিতা তীব্র। বাংলাদেশে ভারতের পুতুল সরকারের পতন ঘটেছে। অথচ এর পরেও ভারত বুঝতে পারছে না একটি দপশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে গণসম্মতিহীন অবৈধ সরকারের পক্ষে দাঁড়ানো তার নিজের স্বার্থের জন্যই বিপজ্জনক।

Share

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর ভারতীয় মিডিয়া এবং অধিকাংশ মেইনস্ট্রিম রাজনৈতিক দল হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মতো আচরণ করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতীয় জনগণেরও এক বিরাট অংশ এই মনোভাবের শরিক। তাঁরা মনে করছেন বাংলাদেশে ‘তালিবানি শাসন’ কায়েম হয়ে গিয়েছে, সর্বত্র হিন্দুদের জবাই করা হচ্ছে ইত্যাদি৷ কষ্টকল্পনা এতদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে যে, অনেকে মনে করছেন, বাংলার পরিবর্তে উর্দু হতে চলেছে বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা।

এই ধরনের অদ্ভুত ভাবনাচিন্তার মূলে রয়েছে আধিপত্যবাদী চিন্তা। বাংলাদেশকে ভারতের চশমায় দেখাই আসলে ‘ভারতের বাংলাদেশ সংকট’ এর মোদ্দা কারণ৷ এই চশমা ফেলানি খাতুন বা স্বর্ণা দাসকে দেখতে পায় না। সুজাতা সিংদের ভূমিকা দেখতে পায় না৷ আওয়ামী লীগের অবর্ণনীয় স্বৈরাচার দেখতে পায় না। অথচ কিছু মন্দির এবং মাজার আক্রান্ত হলে ঠিকই দেখতে পায়। অথচ মন্দির রক্ষায় এগিয়ে আসা মুসলিমদের দেখতে পায় না৷ সবচেয়ে দুঃখজনক হল ‘গণহত্যা’ এবং ‘নৈরাজ্যে’র মধ্যে প্রথমটিকে কম খারাপ বলে মনে করে এই একপেশে দৃষ্টি। সেই কারণেই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নৈরাজ্যকে বড় করে দেখে ‘শেখ হাসিনাই ভালো ছিলেন’ গোছের কথা বলতে পারে।

এই মুহূর্তে ভারতের কোনও বন্ধু দেশ নেই৷ ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়ে মালদ্বীপের ক্ষমতায় এসেছে একটি রাজনৈতিক দল। ভারত ঘনিষ্ঠ নেতা পুষ্পকুমার দহল ওরফে প্রচণ্ড নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন। শ্রীলঙ্কাতেও ভারত বিরোধিতা তীব্র। বাংলাদেশে ভারতের পুতুল সরকারের পতন ঘটেছে। অথচ এর পরেও ভারত বুঝতে পারছে না একটি দপশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে গণসম্মতিহীন অবৈধ সরকারের পক্ষে দাঁড়ানো তার নিজের স্বার্থের জন্যই বিপজ্জনক।

ভারতীয় জনগণের সচেতন অংশ সদ্য ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানেও দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের জনগনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন৷ কিন্তু তাঁরা সংখ্যায় অল্প। ইজরায়েলের মাটিতে দাঁড়িয়ে ‘মাকি’ নামের রাজনৈতিক দলটি যেমন ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, ভারতের মাটিতে যাঁরা বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন তাঁদের কাজটিও প্রায় একই রকম। ভারত পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ইজরায়েলে। এই আগ্রাসনের বিরোধিতা না করে কোনও প্রগতিশীল রাজনীতি হতে পারে না। দুর্ভাগ্যজনক হল, ভারতের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই বাংলাদেশ প্রশ্নে নীরব, অর্থাৎ তাঁরাও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পেরই অংশ।

2 comments

  • Fuad Hasanul Banna

    খুব সহজ ও সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। লেখককে ধন্যবাদ।

  • Rezwan Khair Fahim

    খুবই গোছালোভাবে মূল আলাপটা করেছেন। চমৎকার।

Leave your comment