ইতিহাসে পড়তাম কোন এক রাজা মারা গেছেন, তার ইয়াং পোলা ক্ষমতায় বসলেন। এরপর চক্রান্তকারীরা তারে ক্ষমতা থেকে সরাইয়া ফেললো। তিনি পলাইয়া গেলেন, গিয়া আশ্রয় নিলেন আরেক রাজ্যে। কিছুদিন পরে ঐখান থেকে লোকজন জড়ো করে তিনি আবার এটাক মারলেন নিজ রাজ্য উদ্ধারে, উদ্ধার করে ফেললেন ও রাজা হইলেন।
তখন মনে হইত, কাহিনীটা কী! এই ইয়াং পোলা রাজ্যহারা হইল, তার কিছুই নাই, দূরের এক রাজ্যে গেল ক্ষমতাহীন ভাবে, তাইলে লোকজন তার পিছে জড়ো হইল কেন? আর, একইভাবে, অন্য কোন সাধারণ ইয়াং পোলা কেন রাজা হইবার চেষ্টা নিত না তখন?
এর উত্তর আছে তখনকার সময়ে রাজা কে হবেন, এই ধারণার মধ্যে। মানুষজন মনে করত স্বয়ং জগতবিধাতা একটা বিশেষ অধিকার দিয়া পাঠাইছেন রাজারে রাজ্য শাসনের। ফলে রাজ্য শাসনের অধিকার তারই, এবং তিনি গত হইলে তার পোলার। মানুষ এইটা মাইনা নিত, তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক ছিল।
এইজন্য দেখা যায় রাজার পোলারা বা কোন রাজা, রাজ্যহারা হইয়া তখন দূর্যোগ দূর্বিপাকের পরেও আবার রাজ্য উদ্ধার কইরা ফেলছেন।
এর আগে, হান্টার গেদারার সমাজে, বা পরের প্রাথমিক কৃষিসমাজেও ক্ল্যান ভিত্তিক শাসন ছিল। ক্ল্যানের প্রধানই ক্ল্যানটারে চালাইতেন।
আধুনিক কালে আমরা যেইটারে ডেমোক্রেসি বলি, যে ভোটাভুটির মাধ্যমে আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করি, আমাদের রাষ্ট্র চালানোর লোক ঠিক করি, এর ভিত্তি হইল সোশ্যাল কনট্র্যাক্ট। মানুষদের লগে শাসকের চুক্তি হয়। শাসক বলেন আমি এই এই এই করব। মানুষ তারে নির্বাচন করেন। তিনি তাদের চাহিদামত কাজ করতে না পারলে তারা শাসক বদলাইতে পারবে, এটাই চুক্তির শর্ত।
যখন কোন সরকার পাবলিকের এই নির্বাচন করার ক্ষমতা জোর করে কাইড়া নেয়, তখন সোশ্যাল কনট্র্যাক্ট এর চুক্তি শর্ত ভঙ্গ হয়। সে তখন ফোর্স প্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকে।
এখন আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলে কী হচ্ছে, ফ্রম এই পার্সপেক্টিভ, তা দেখি।
সাতচল্লিশে আমাদের দেশ যখন তৈরি হয়, তখন আমাদের পাবলিকের এক ধরণের আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল। ওই আশা আকাঙ্ক্ষাগুলা পূরণ হয় নাই একটা সময়ে গিয়া। তখন কন্ট্র্যাক্ট রি এভালুয়েট করতে হইছে।
এটা করতে গিয়া বনিবনা হয় নাই। একাত্তরে দেশ স্বাধীন হয়।
আবার নতুন কনট্র্যাক্ট।
সেইখানেও নানা সময়ে পরিবর্তন আসছে। এই ২০২৪ সালে যে অভ্যুত্থান হইল, এটা পুরনো চুক্তি রিএভালুয়েট ও রি নেগোসিয়েশনের জন্য।
কারণ, দেশের একটা গ্রোথ হইছে। পাবলিকের নয়া আশা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হইছে, তাদের চাহিদা স্বপ্নের বদল হইছে, এবং নতুন জেনারেশন আসছে। স্বাভাবিক ভাবেই এখন কন্ট্র্যাক্ট পুরানো স্টাইলে থাকলে এই নয়া সময়ের আশা স্বপ্নরে ধারণ করতে পারবে না। পারে নাই।
এখন, এই অভ্যুত্থানের পরে সমস্ত ইন্সটিটিউশন, সরকারী স্ট্র্যাকচারের পরিবর্তন হতে হবে। নতুন সময়ের আশা আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার হিশাবে কন্ট্র্যাক্ট এর পুনর্লিখন হবে, রাজনৈতিক দলগুলা এসব মানার অঙ্গীকার করবেন, নতুন দল আসবে, এসপেক্টেশনের বার সেট করে দেয়া হবে।
যদি এটা না হয়, তাহলে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে, এবং সাথে সাথে নতুন অভ্যুত্থানের বীজ বপিত হবে।
এই অভ্যুত্থানরে তাই, কেবল নির্বাচনী সিস্টেম ঠিক করার অভ্যুত্থান হিশেবে দেখলে ভুল হবে, ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করে আসছিল রাজনৈতিক দলগুলা।
এই অভ্যুত্থান ও এর পেছনের আন্দোলন কোন দলের পক্ষের রাজনৈতিক না হইয়াও সবচাইতে বেশি রাজনৈতিক, কারণ পুরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রটার চুক্তিনামা সংস্কারই এর উদ্দেশ্য ছিল।
আমি দেখলাম কারা জানি বলতেছেন আমরা রাজনৈতিক না বা রাজনৈতিক দল করব এমন কথা আছিল না। কথা হয়ত আছিল না, কারণ যেই পাটাতন আছে, ওইখানে রাজনৈতিক দল করার প্রশ্নই নাই আপনাদের কারণ আপনারা ছিলেন ছাত্র আন্দোলনকারী। কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় সময় আপনাদের কাছে দায়িত্ব তুইলা দিছে কিছু, যেহেতু অভ্যুত্থানটা সফল হইয়া গেছে। উম্বের্তো একো কইছিলেন, রিয়াল হিরো হইল হিরো বাই এক্সিডেন্ট, সে স্বপ্ন দেখত অন্য সবার মত এক অনেস্ট কাওয়ার্ডের জিন্দেগী যাপনের। তো, দায়িত্ব যখন পরেই গেছে, যখন হইয়া গেছেন হিরো, তখন এই নতুন সময়ে পাবলিকের নয়া আশা আকাঙ্ক্ষার অনুপাতে সোশ্যাল কন্ট্র্যাক্ট পূনর্মূল্যায়ন করেন ও রি-নেগোশিয়েট করেন। পাটাতন সংস্কার করেন, যেখানে দাঁড়াইয়া হবে আগামীর রাজনীতি।