১.
অনেকেই কইতেছে যে, জুলাই বিপ্লবের কোন চেতনা নাই, আছে গণ আকাঙ্ক্ষা। তারা ঠিকই কইছে। এই বিপ্লবের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোন চেতনা আছিল না। ডাইনে, বাঁয়ে, মাঝখানে দিয়ে বইসা, খাড়ায়া, চলতে থাকা কোন রাজনৈতিক দল বা তাদের চেতনাকে বাংলার ইতিহাসের সবথাইক্যা হিংস্র এবং অমানবিক স্বৈরাচারী সরকারকে দাবড়ায়া দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করতে দেখিনা। কারণ, তারাও জানে যে এইটা প্রচলিত অর্থে কোন দলেরই একার কাজ আছিল না। প্রত্যেক ধর্মের, পেশার, বয়সের মানুষ সশরীরে বিপ্লবের ময়দানে হাজির আছিল। এজন্যই এই বিপ্লব গণবিপ্লব। এই সাফল্যের কৃতিত্বও তাই জনতারই।
২.
জুলাইয়ের ৩৫ তারিখে আল্লাহ্র কাছে চাইছিলাম – হে আল্লাহ্, তুমি ফেরাউন এ সদলবলে অপদস্ত কর এবং সমূলে ধ্বংস করো। রহমানুর রহীম আল্লাহ্ সেই দোয়া কবুল করছেন। কয়েক হাজার শহীদ আর অগণিত মানুষের রক্তের বিনিময়ে, সর্বোপরি সমগ্র দেশের জনতার অদম্য আন্দোলন আর প্রতিরোধের মুখে ‘হাসিনা পলাইছে’, জনতার মুক্তি ঘটছে। জেন-জি র্যাপাররা গাইছে ‘আওয়াজ উডা’, ‘কতা ক’, আরও অনেকেই গাইছে ‘দেশটা কারো বাপের নাকি?’ স্বৈরাচারমুক্ত স্বাধীন দেশে মন খুইল্যা কথা কইছে পারতেছি। সুখ দুঃখের কথা, আশা আকাঙ্ক্ষার কথা, আজাইর্যা আলাপ-আড্ডা, সবই। সব্বাই। সবখানতেই। স্বাধীনতার এই যে রূপ, স্বাধীন দ্যাশের এই যে দিনযাপন, মুক্তির এই যে আরাম, এইটা টিইকা থাকুক – এইটুকুই চাই।
৩.
বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের মাঝে বালুকণার মতো ক্ষুদ্র একজন আমি। এই আমার আকাঙ্ক্ষা হল জুলাই বিপ্লবে স্বাধীন করা নতুন বাংলাদেশ যেন চিরদিন মুক্তই থাকে। দেশের সকল মানুষ যেন মন খুইল্যা কথা কৈতে পারে। নিজের স্বপ্ন দেখতে এবং সেই স্বপ্নের পথে ভয়ডর ছাড়াই হাটতে পারে। এমন কোন চেতনা যেন নাজেল না হয় যেইটা আমাদের উপরে কোন মহামানব কিংবা বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বপ্ন চাপায়া দিবো। এতদিন যেই পথে দেশ চলছে, সেই পথ বদলাইতে হবে নিশ্চয়ই। কারণ, আমাদের গন্তব্য সমস্ত জনতার মুক্তির দিকে।
৪.
রাষ্ট্র সংস্কার শুরু হইছে। নিশানা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকেই মনে লাগতাছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে নিজ নিজ বিষয়ে গবেষকরা ভিসি পদে আসতেছেন। কোনপ্রকার “ফুলের তোড়া” বা “বিনম্র শ্রদ্ধা”সহ অভিনন্দন নেওয়ার বদলে তাদের কেউ ছাত্রদের সাথে নামাযের জামাতে দাড়ায়া পরতেছেন, কেউ আর কাওয়ালীর আসরে যোগ দিতেছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের স্থানগুলা “পিও নেতা”দের গলাবাজি আর অন্ধ সমর্থকদের চেতনার শিৎকারের বদলে মুক্ত আড্ডা, আলাপ, গানবাজনায় মুখর হয়া উঠছে। বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপের স্থানগুলাতে “হে পিতা”র বন্দনার বদলে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুরু হইছে। যেই বাঙালি মুসলমানের পরিচয় ধারণ করি বৈলা জীবনের একমাত্র স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার স্বপ্নের কবর হইছিল, সেইখানে চাষাভুষার সন্তানেরা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারতেছে, আবাসিক হলের গোসলখানায় বা আর কোন কোনাকাঞ্চিতে গিয়া গোপনে নামায পরার বদলে সিনা টান কৈরা নিজের রুমে, এমনকি হলের মাঠেও জামাতে নামায পরতে পারতেছে। আলহামদুলিল্লাহ্।
৫.
জন্মভূমি বাংলাদেশে মুক্ত থাকুক। মাতৃভূমি বাংলাদেশ সকল নাগরিকের জন্যই মায়ের আদরের আচল পাইতা দিক, বাপের মত সকলকে সন্তানের মতো নায়েক কৈরা তুলুক, অভিভাবকের মতো সমস্ত বালামুছিবত থাইক্যা সকলকেই আগলাইয়া রাখুক।