জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হচ্ছি। আসলেই কি আমরা এমন অথর্ব আর ফাঁপা ব্যবস্থায় কেবল অনীহায়, কিংবা বিরোধী দলের জন বিচ্ছিন্ন অলসতায় সহ্য করে গেছি?
নাহ, আসলে ঔপনেবেশিক শাসনের ঘোর কাটার শুরু এটা। এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের মত বলাটা যে তুলনা তৈরি করে, আমি সেটার বাইরে যাব। এটা আমাদের মুক্তির যে ক্রমাগত সংগ্রাম, তার মূল স্বতঃসিদ্ধে আবার পৌঁছেছি আমরা। এটা আমাদের জন্য একটা সুযোগ, অবশ্যই শেষ সুযোগ না। কিন্তু আমরা বারবার ডিসেসিভ জায়গায় পৌঁছে ফিরে গেছি।
১৯৪৭ সালে, ১৯৭১ সালে, আমরা বিমূর্ত কিছু শব্দে, আইনজীবী আর সিস্টেমে সমর্পিত আমলাদের আমাদের লোক ভেবে ফিরে এসেছি। আমরা ২৪ সালে এই ভুলটা করব না। আমরা ইয়াজুজ-মাজুজ নই— কিংবা যদি চান গৌরবান্বিত মিথের আশ্রয়ে— সিসিফাস, তাতেও কিছু কমবেশি হয় না।
আমি ভয় পাইনা— হতেই পারে এবারও আমাদের হাওয়াই মিঠাই হাতে নিয়ে ফিরে যেতে বললেন— আমরা ফিরলাম। আবার জগদ্দল চেপে বসল কেউ— আমাদের সন্তানেরা কি সহ্য করে যাবেন? না তাঁরাও টেনে হিঁচড়ে নামাবে, তারপর আবার সেই শঙ্কায়— কেন এবারও আমরা এই পাতলা পর্দাটা ভাঙ্গার আপাত ট্যাবুটা নিজের হাতেই তুলে নিতে দ্বিধা করব? কিছু গালগপ্পে কেন বারবার আমরা মুখোমুখি হব আমাদের?
৭২ এর সংবিধান মূলত কিছু শিক্ষিত লোকের ডকুমেন্টেশন এর কেরদানি মাত্র। জারগন আর ফাঁপা বুলি, আর সেই সংবিধানকে এদিক ওদিক সংশোধন করে যেটা হয়েছে সেটা ঐ নির্বাহী বিভাগ, বিচারবিভাগ এর গঠন নিয়োগ এসবের কচকচানি। জনগণ কেবল ভোট দেবার যন্ত্র মাত্র সেখানে। রাষ্ট্র কেবল সমাজ-বিচ্ছিন্ন এক সুপারইমপোজড এনিটিটি।
যেই সংবিধানের ফোকরগুলোতে আমরা দানবের উত্থান দেখি সেই সংবিধানের কথিত ধারা উপধারায় আমরা এক মুহূর্ত নিরাপদ নই। সংবিধান শুরু হোক সমস্ত মানুষের স্রষ্টার নামে- যে স্বত্বার সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক অসম। এ বাদে যেকোন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির চুক্তি কন্ডিশনাল- সমান সমান।
সুতরাং রাষ্ট্র তা বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কুক্ষিগত হবার কারণেই হোক, অন্য কোন বাইরের রাষ্ট্রের প্ররোচনায় হোক- কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করে আর সেই আচরণের স্বাভাবিক প্রতিবাদ জানাবার অধিকার কোথাও বাধাগ্রস্থ হয়- তাহলে বঞ্চিত মজলুম ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টিই রাষ্ট্র। তাই গত ১৫ বছর কথিত রাষ্ট্রের বৃহত্তর প্রয়োজনে প্রতিটি রাষ্ট্রীয় সামষ্টিক বলপ্রয়োগ রাষ্ট্রদ্রোহের আওতাধীন। যদি সেটাকে সরল বিশ্বাসে কিংবা কোনভাবে এই সংবিধান অপরাধ না মনে করে তাহলে এই সংবিধানের আওতায় আমি ছাত্র-নাগরিক-জনতার বিশেষ দায়মুক্তির সুযোগকে আন্দোলনের পরাজয় মনে করব।
সংবিধান সংশোধন সেই সংশোধনকে সংশোধিত করার সুযোগ রেখেই করা। এই সংবিধানের আওতায় নির্বাচনকে শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের বন্ধ ঘরে করা কথিত জনগণের ভাগ্য-বিধাতাদের নির্বাচন নামের প্রহসনের দায়মুক্তির জায়গা দেখতে পারি না।
১৯৯১ সালে ভোটার টার্ন আউট ছিল ৫৫ পারসেন্টের একটু উপরে, ১৯৯৬ এবং ২০০১ এ টার্ন আউট ৭৫% এর কমবেশি কিন্তু ২০০৮ এর ইলেকশনে টার্ন আউট হয় ৮৭%। যেই দল দুটো মোটামুটি .৫ থেকে ৪ পারসেন্ট এর পপুলার ভোটের মার্জিনে ছিল। ২০০৮ সালের ইলেকশনে সেই পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায় ১৬%। অনলাইনে ইলেকশন ডাটা বাংলাদেশের সেভাবে অ্যাভেইলেবল না- আমি আগ্রহী কেউ থাকলে আহ্বান করব এ নিয়ে একসাথে কাজ করার। একটা মজার ব্যাপার দলগুলোর ভোট শেয়ার অ্যাবসুলিট টার্মে বেড়েছিল। যেমন ৯১ এ দুইদলের ভোট ছিল ৩০% এর একটু উপরে, ৯৬ সালে বিএনপি ৩৩ দশমিক ৬২, আওয়ামীলীগ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নেয়, ২০০১ এর ইলেকশনে বিএনপি ৪১ মত আওয়ামীলীগ ৪০ দশমিক ৩ এর মত- কিন্তু আসন পার্থক্য অনেক বেশি হয়- এটার অনেক বড় কারণ আওয়ামীলীগের ভোট কন্সেন্ট্রেটেড। তবে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় একটা ভয়াবহ ম্যানিপুলেশনের জায়গা হাজির। কিন্তু এই যে ভোট শেয়ার বাড়া এটাকে আপনারা ন্যাচারালি নিলেও দুইরকম অর্থ করতে পারেন— ইলেক্টেবল কমে যাওয়া, এলাকায় প্রার্থীর নিজস্ব ভোট থাকা— এমন পপুলার কেন্দ্রহীন নেতৃত্ব যেমন ফিউডাল সমাজে ঘটে অন দ্যা আদারহ্যান্ড এটা দলগুলোকে কেন্দ্রমুখী রাখে না। তো এই স্থানীয় রাজনীতি ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকলে তা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের পর এই যে ভায়োলেশন— তা ২০০৮ এর সিস্টেমেটিক ডিলের পরিণতি।
বানরের হাতে নাকি মেশিনগানের চেয়ে বেসবল ব্যাট বেশি ভয়াবহ— তাই ঘটল, একটা রাজনৈতিক দলকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দিলেনই না উল্টো নিজেদের কতিপয়ের দায়মুক্তির জন্য পিলখানা ঘটালেন। বন্ধ দরজার পেছনে আমাদের কোটি মানুষের সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার কারোর নেই- আমরা গরু ছাগল না। মানুষ।
আমরা সেই প্রফেসর ইউনুসকে এনেছি যিনি যখন নিজে হতে চেয়েছেন আমরা চাইনি— তিনি আমাদের চাওয়াকে বুঝতে পেরেছেন, মঈন ইউ আহমেদ ফখরুদ্দিন আহমেদের চাওয়ার উপর আমাদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন— এবং তিনি জানতেন শেখ হাসিনার একমাত্র যে জিনিসটা উনাকে অস্বাভাবিক ক্ষমতাধর বানিয়েছে— উনি মহৎ শত্রুর সন্ধানে থাকেন। শেখ মুজিবর রহমান আর তার পরিবারের হত্যায় জড়িত থাকা হত্যাকারীদের মাঝে তিনি যেন পিতার এই নৃশংস হত্যার স্বাভাবিক বিশ্লেষন ক্ষমতা হারালেন, যেন তিনি তার পিতার ঘাতক হিসেবে জিয়াউর রহমানকে চাইলেন, তিনি ২০০৮ এ তাকে রাজনীতি থেকে সরানোর দোষ আপসকামী গভর্ণর আর জেনারেলকে ভাবতে চান নাই। তিনি বেছে নিলেন প্রফেসর ইউনুসকে।
আমরা এই প্রফেসর ইউনুসকে ফখরুদ্দিন কিংবা মঈন ইউ আহমেদ হতে দিতে পারি না। আমাদের যে ছাত্ররা জীবনবাজি রেখে মাঠে নেমেছিল একটা খুনী ব্যবস্থা যে কিনা রাষ্ট্র দাবি করেছিল এই সংবিধানকে সামনে রেখে, সেই সংবিধান এক্ষেত্রে পুলিশের উর্দির মতই, বিডিআরের উর্দির মতই নিক্ষেপযোগ্য- কেননা এই সংবিধান তার লঙ্ঘনকেও আটকাতে ব্যর্থ।
কিন্তু এই আন্দোলন কেন গণবিস্ফোরণ হলো— তা হলো এই যে রাষ্ট্রকে মেনেই, তার একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হবার খুব স্বাভাবিক ইচ্ছাকে বহুচর্চিত নোংরামি, বুলিইং দিয়ে তারা উত্তেজিত করল— একটা মজার ব্যাপার এখানে বলি, নিম্ন আদালতে বেগম জিয়ার প্রশ্ন ছিল আর আমি অপরাধী, সেটাকে বিচারক তার স্বীকারোক্তি হিসেবে রায়ে লিখেছিলেন। রাজাকার বলার প্রতিক্রিয়ায় যখন রাজাকার শব্দটার প্রতিবাদে এই রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী হবার ইচ্ছাকে রাজনৈতিক রাষ্ট্রবিরোধী শব্দে ফ্রেম করার আবার চেষ্টা হলো এবং সেটার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ে সেই একইগল্প বানানোর চেষ্টা হলো, এ দেশের প্রত্যেক নাগরিক বুঝতে পেরেছিলেন পাভলভের কুকুরের মুখে লালা আসার বেল বেজে গেছে, আমাদের ভার্সিটির হলগুলো হয়ে ওঠতে যাচ্ছে আবু গারিব- আর আবরারদের কবর দেবার জন্য আমাদের জমি কম পড়ে যাচ্ছে।
আর সম্ভবত হাসিনা যদি এতোই নিখুঁত প্ল্যান করতে পারতেন তাহলে এই দুই জায়গায় সফল হতেন। হাসিনাশাহী টিকে ছিল হাসিনা অফ স্মল থিংসের উপর। এতোসব করার যোগ্যতা কিংবা বুদ্ধি উনার ছিল না যেটা ছিল তা হলো হাসিনাত্ব নামক যে কমন গড কমপ্লেক্স, যে ক্ষুধার্ত ইমপালস, ক্ষমতা স্পন্দিত বুকে যখন সেসব মানুষের নাম হয়েছিল শেখ হাসিনা।
আমি সামরিক আমলাতন্ত্রের নির্দেশ পালনের বাধ্যবাধকতার জায়গায় যাচ্ছি না, যদিও উনাদের আনুগত্য একমাত্র আইনি নির্দেশের পরিসরে। প্রোপার্টি ডিলার হয়ে ওঠার, ডেপুটিশনে ইনকাম করার যে প্রবণতা সেখানে যে ফৌজি আদর্শ সেটাকে কোন সেনাবাহিনীই আসলে ধরে রাখতে পারে না- বড় বড় ওয়ারমেশিনগুলো মাঝে মাঝে তাও অন্য দেশের উপর হামলা টামলা করে এনাদের শক্তিকে চ্যানেলাইজ করে। তো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে- ওয়ার অন টেররের সময়ে এই সামরিক বাহিনীকে দেশের ভেতরে অপারেশনের যে ট্রেইনিং এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন করেছে সেটায় আসলে ফোনালাপ, আর্থিক লেনদেনের খবর জানা এবং সেটাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার লোভ সামলানো কঠিন- আর এইসব কাজে একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেই ক্ষমতা পায়, সেই ক্ষমতা শেখ হাসিনা একা তৈরি করেন না, বরং এই হাসিনা অফ স্মল থিংসরাও শেখ হাসিনাকে একটা সর্বগ্রাসী প্রতিষ্ঠান বানান।
বেসামরিক আমলাতন্ত্র বেসিক্যালি পুলিশতন্ত্রই। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হয়েছে বিচারবিভাগে- এখানে উচ্চপদস্থতাকে আলাদা করে রক্ষাকবচ দেয়ার দরকার হয় নাই- এটা নিজের মতই নিজ চেম্বারকে ছোট গণভবন বানিয়েছেন।
এরপর শুরু হয়েছে স্টার্টআপ বলতে একধরনের ইয়ার্কি। ডেসটেনির তো একটা গল্প ছিল, কিন্তু ইভ্যালির কথা ভাবেন- আপনি ফার্মগেট প্রাইসে অর্ধেকমূল্যে জিনিস পাবেন- এমন বিশ্বাস তখনই আসে যখন আপনার কাছে অর্থনীতি এক ক্যাসিনো হিসেবে সাব্যস্ত হয়। এটার জন্য সরকারকে কিছু করতে হয় নাই- ফাটকাবাজরা হাল ছাড়ার আগ পর্যন্ত এরকম বিশ্বাসে ছিলেন যে শিব ঠাকুরের এই আপন দেশে সব সম্ভব। সুতরাং শেখ হাসিনাকে সিঙ্গেল আউট করে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক বিহেবিয়ারের এই ট্রেন্ডগুলোকে অস্বীকার করতে পারবেন না।
আপনারা এর মাঝে কেবল কর্পোরেট অফিসগুলোর চুতিয়াপনা কোন লেভেলে গেছে সেটা একনজরে দেখতে পারেন উদাহরণ হিসেবে। বস ইজ অলওয়েজ রাইট, নিজেকে এক্সপ্রেস না করা, পজেটিভ থিংকিং এসবের নাম করে যত রকমের ভিলেজ পলেটিক্স, ছোটলোকি জোচ্চুরি ইত্যাদিকে অসরকারি হায়ারার্কিও স্বাভাবিক হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। হাসিনাশাহীর ছোটলোকির যে অফিস অঞ্চলে সমালোচনা তা যেন এই দেশের একজন রাজনীতিক তুলনায় নিজের ছোটলোকিরে, অধিকার লংঘনকে মামুলি বলে একধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রাখা হত। আর অবশ্যই এই ছোট কুয়ার লোকজন শেখ হাসিনার সমালোচনা যে হাসিনার ক্ষমতাবলয়ে থাকা তাদের মামাত-চাচাত কিংবা অন্য সম্পর্কের খুব পরিচিত তাঁর ঘনিষ্ঠ উঠাবসার কারণেই করছে তাও জানিয়ে রাখত- এটাও আশ্চর্য রকমের ।
সভ্যতা তৈরিই হয়েছে মানুষের ইন্সটিংক্ট দ্বারা, গত পনের বছরে যারা সফল হয়েছেন তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও অসফল হতেন না- আপনি অনেক প্রতিভা নিয়েও না খেয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু প্রবল ইন্সটিংক্ট আপনাকে ক্ষুধায় থাকতে দেবে না। তাহলে এখানে সমস্যাটা কোথায়- সমস্যাটা হচ্ছে বেপরোয়া হওয়া। আপনি নিজের মত নিজে কাজ করে যাবেন খুব বড় কোন ক্যারিয়ার কিংবা প্রনোদনার প্রত্যাশা ছাড়াই- সেটাও আপনাকে কারো খেয়াল খুশীর বলী হওয়ার নিশ্চয়তা দেবে না। এটা মারাত্মক মানসিক চাপ তৈরি করে। আপনি প্রতিটা খলের পিছনে সরকার কিংবা শেখ হাসিনাকে দেখেন- এক অজেয় বাস্তবতা হিসেবে এবং এক অজানা অশুভ শক্তির কাছে হাল ছেড়ে বসেন। এই হাল ছেড়ে দেয়াটা ২০১৪ সালের ইলেকশনের পর সরকার টিকে যাওয়ায় সবার উপর আছড়ে পড়তে থাকে, না আমেরিকার মানবাধিকার নীতি না আর কিছু আপনাকে বাঁচাতে আসে।
আমরা জানি এই বারবার বাইরের হস্তক্ষেপ, বিশ্ববিবেকের নাড়া খাওয়ার প্রতীক্ষায় আমরা বহু দেরী করে ফেলি। আমরা একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রীকে কদর্য কুৎসিত রসিকতায় মাততে দেখি, আমরা সাংবাদিকদের লেজ নাড়তে দেখার অবস্থায় যাই।
এই আন্দোলন কেবল জুলাইয়ের আন্দোলন না— এটা বাংলাদেশ হওয়ার আন্দোলনের আর একটা ব্যাটল মাত্র। আমরা বাংলাদেশ হওয়ার যুদ্ধের শেষ ব্যাটল বানাতে পারি এটা কেবল আমাদের একটু ধৈর্য নিয়ে।
১। এই সংবিধানের আওতায় থাকা যাবে না, আচ্ছা এটা ক্লিয়ার করা দরকার, রাষ্ট্রের সংবিধান না থাকলেও আপনার সাংবিধানিক কোন অধিকার নাই হয়ে যায় না। যেহেতু ১৪, ১৮, ২৩ এর মত ইলেকশন নামের প্রহসন এই সংবিধান শাস্তিযোগ্য করতে পারেনি- এই সংবিধান তখনই আসলে নাকচ হয়ে গেছে। সুতরাং এই সংবিধান ছাড়াই আমরা গত ১২ বছর টিকে আছি।
২। রাজনীতিবিদদের পাগলামি আর ছ্যাঁচড়ামিকে রাজনীতি ভাবার সুযোগ আমরা না দিই
৩। আমাদের বাংলাদেশ হয়ে ওঠার পরিক্রমায় ব্যক্তির বিকাশ ঘটেছে, ইতিহাসে ব্যক্তিকে তার প্রসঙ্গে আর প্রেক্ষাপটে সেইভাবেই রাখা হোক।
৪। বর্তমান বাস্তবতায় হাসিনা আর খালেদা একই এটা বলার সুযোগ নেই। একটা মিথ আছে বাজারে- যে লীগ ক্ষমতায় ২১ বছর পরে এসেছিল। এই দলটি তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই ক্ষমতার থেকে দূরে থাকেনি। আর একটা কথা এটার মানে এই না যে আওয়ামীলীগ অচ্ছুৎ কিছু, এটা লীগের রাজনীতি, তার সক্ষমতাও। আইয়ুব খান মুজিবর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামী করার আগপর্যন্ত আওয়ামীলীগের রাজনীতি এমন কোন আইয়ুব বিরোধী ছিলও না। কিন্তু তাতে কিন্তু মুজিবর রহমানকে জনগণ তাদের সহযোদ্ধা হিসেবে মানতে আপত্তি করেনি- এরশাদের গোটা সময় আওয়ামীলীগ এরশাদের দায়মুক্তির রাজনৈতিক ফেস ছিল। সুতরাং গত পনের বছরে জনগণের সাথে সাথে যে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা অকাতরে জীবন দিয়েছেন, যেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তি জীবনের এমন কোন সীমা অতিক্রমের জায়গা নেই সেটার শিকার হননি- জেলে যাবার পরও ২০১৮ সালের ইলেকশনে তিনি এই রেজিম এবং তার তল্পিবাহকদের সুযোগ দিয়েছিলেন, সেটার প্রতিক্রিয়ায় যে ওয়াদা ভঙ্গের ঔদ্ধত্য হাসিনাশাহী দেখিয়েছে তাতে ২৩ এর ইলেকশন এমনকি হাসিনা, যার কি না পরিচয় জনসমর্থন তাঁকে ছুঁড়ে ফেলেছে, দম্ভসহ পালাতে দেখেছি আমরা। তাদেরকে এক্সক্লুড করবেন না। এমনকি আওয়ামীলীগের যে কর্মীরা বঞ্চিত হয়েছে কংক্রিট অবস্থার জন্য, যারা ১৪ এর ইলেকশনের ব্যাপারে আপত্তির কারণে সাফার করেছেন তাদেরও কথা বলতে দেন। বাকশাল থেকে আওয়ামীলীগ হতে দেয়ায় যারা আফসোস করছেন, সেটা করবেন না- আওয়ামীলীগকে পুলিশ আর গুণ্ডাতান্ত্রিক দল থেকে বের হয়ে আসতে সহযোগীতা করেন। পালিয়ে যাওয়া রাজার প্রজারা আমাদের অধিকতর করুণার।
গোয়েন্দা আড়িপাতার পলিসি জানতে চান- ১৪ সালে শেখ হাসিনা এবং বেগম জিয়ার ফোনালাপ কীভাবে ধারন করা হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে। কে কে ফোনালাপ ট্যাপিং এর ভিত্তিতে ব্ল্যাকমেইল্ড হয়েছেন তাদের তা জানানোর সুযোগ করে দিন। এক্সপোজ করার সময় এটা নয়। র্যাব কিংবা এরকম স্পেশাল পারপাজে তৈরি হওয়া বাহিনী ডিসলভড হবার মেয়াদ জানান দরকার। রিম্যান্ড ক্লজ ছাড়াই বাতিল করা হোক।
৫। ট্রুথ আর রিকনসিলশন করেন, কোন ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের ইরাদায় না যাই। ছাত্রলীগ যা করেছে, তা সবাই করতে পারে, কিন্তু সেটা না করাটাই আমাদের তরুণকালের পরীক্ষা। আওয়ামীলীগের রাজাকার-মুক্তিযুদ্ধের খেলায় আপনারা যদি বলেন কেবল আবরার একা মারা গেছে তাহলে আমরা হয়তো এক্সক্লুড করছি তাঁকে এমন নির্যাতন করার মত নির্যাতক যাদের কি না বয়স, পরিবার, একাডেমিক জীবন আবাররের মতই- সেই ছেলেগুলো কোন ন্যারেটিভে হত্যা করেছে সহপাঠীকে ? সুতরাং পাবলিক শেমিংকে ইনসাফ বানাবেন না। আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে।
যে প্রগতিশীলরা এ যাবতকালে মাদ্রাসা ছাত্রদের ব্রেনওয়াশড বলে মেরে ফেলতে কষ্ট পায়নি, আমরা সেই প্রগতিশীল নই- এই ব্রেনওয়াশড ছাত্রলীগের কর্মীদের উপর নির্যাতন আমাদেরকেই নির্যাতন। ৪। যদি আন্দোলনকে কলুষিত করার জন্য কেউ কন রকম প্রোপ্যাগান্ডায় যায়- ভয়ে পিছায় আসা যাবে না, ছাত্ররা নেমেছে খুব ভেগ দাবিতে কিন্তু আমাদের সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেই সাথে আমরা কিন্তু ছাত্রকৃত ভায়োলেন্সকে সবটাই ঔন করছি, বেছে বেছে না। সুতরাং আমাদের অনুরোধ থাকবে নিজেরা ঐ অবস্থায় যান, হয়তো গার্মেন্টস শ্রমিক, আরও সাধারণরা নামবে, তাতে যে ভায়োলেন্স হবে আমরা সেটাও মানব। সুতরাং যার কাজটা সেই করবেন।