জনবিতর্ক

ইমরুল হাসান

একটা কমন গ্রাউন্ড তৈরি করা নিয়া 

September 27, 2024   0 comments   2:00 am

একটা মিনিমাম গ্রাউন্ড প্রপোজ করতে চাই আমি— সেইটা হইতেছে, যে ক্রিমিনাল বা অপরাধি তার জন্য ন্যায়বিচার এনশিওর করা লাগবে সবচে আগে; ধরেন কেউ খুন করছে, তারে অন্য কেউ খুন করতে পারবে না, তার বিচার হইতে হবে!

Share

পলিটিকাল লিডার হিসাবে নেলসন মেন্ডেলারে আমার পছন্দ এটলিস্ট ৩টা কারণে— 

১. জেল থিকা ছাড়া পাওয়ার পরে ইলেকশনে জিইতা সরকার গঠন করার আগে উনি বলছিলেন যে, সাউথ আফ্রিকায় ব্যক্তি-মালিকানা থাকবে— কারন ব্ল্যাক পিপলরা কোনদিনই ব্যক্তি মালিকানার স্বাধীনতা পায় নাই; আসলে সোশাল জাস্টিসও কোনদিন আসবে না যদি সোসাইটিতে ইনডিভিজুয়াল ফ্রিডম না থাকে, আর ফ্রিডম তো একটা ইকনোমিকাল ঘটনাও অনেকটা… (এইটা নিয়া আরো অনেক কথা তো আছেই)

২. উনারে জেলে নেয়ার কারণ ছিল উনি গেরিলা-যুদ্ধ শুরু করতে চাইছিলেন, উনি ‘অহিংস’ ছিলেন না, কিন্তু যখন উনারে জেলে ভরা হইলো, উনি সেইখানে ‘অহিংস’ আন্দোলন শুরু করলেন; মানে, পলিটিকাল একশনের জায়গাতে উনি ফ্লেকসিবল আছিলেন; এইটা জরুরি, আইডিওলজিকালি অন্ধ না হওয়াটা, গ্রেট লিডারের এইটা একটা লক্ষণ…

৩. পয়লাবার ইলেকশনে জিতার পরে পরেরবার উনি আর ইলেকশন করেন নাই, পলিটিকস থিকা রিটায়ার করছিলেন, উনি ক্ষমতার লোভ সামলাইতে পারছিলেন, এই ডিসিশানও খুব কম মানুশই নিতে পারে

উনার কোন খারাপ দিক নাই— তা না, আমি একটা উদাহারণ হিসাবেই উনার কথা বলতেছি; কারণ উনি যেইটা করছিলেন একটা কমন গ্রাউন্ডরে এক্সপ্লোর করার ট্রাই করছিলেন, সব পলিটিকাল লিডার’রাই এই কাজ করতে চান বইলা আমি মনে করি; এমনিতে সরাসরি বলা হোক বা না হোক যে কোন সমাজ, রাষ্ট্র তো কিছু কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা বুঝের উপর বেইজ কইরাই চলে… 

তো, এইরকম কমন গ্রাউন্ডগুলা কী হইতে পারে, যদি আমরা একটা ডেমোক্রেটিক সমাজ, রাষ্ট্রের কথা ভাবতে চাই বাংলাদেশে?

ক. কোন তর্কগুলা আমাদের করা দরকার?

কমন গ্রাউন্ড মানে এইটা না যে, এই ডিসিশানগুলা ফাইনাল, এর কোন নড়চড় করা যাবে না! বরং কিছু কালচারাল কনফ্লিক্ট সবসময়ই থাইকা যাবে, যেইগুলার বেপারে একটা পজিশন আমরা নিতে রাজি হইতে পারবো, এবং সময় সময় রিভিউ করাটাও মেবি বেটার…

তো, এইরকম তর্কগুলা করতে পারার ভিতর দিয়াই একটা কমন গ্রাউন্ডের দিকে আমরা যাইতে পারবো বইলা আমার মনে হয়; এইরকম কয়েকটা জায়গার যদি কথা আমি বলি, সেইগুলা হবে এইরকম— 

১. সোশাল জাসটিস বা ইনসাফ কেমনে এনশিওর করবো আমরা? 

বাংলাদেশের সমাজে ও রাষ্ট্রে সবচে বেশি যেইটা জরুরি সেইটা হইতেছে ইনসাফ কায়েম করা, জাস্টিস বা ন্যায়-বিচার এনশিওর করা; এইটা নিয়া কারো দ্বিমত থাকার কথা না…

এর একটা মিনিমাম গ্রাউন্ড প্রপোজ করতে চাই আমি— সেইটা হইতেছে, যে ক্রিমিনাল বা অপরাধি তার জন্য ন্যায়বিচার এনশিওর করা লাগবে সবচে আগে; ধরেন কেউ খুন করছে, তারে অন্য কেউ খুন করতে পারবে না, তার বিচার হইতে হবে! এইভাবে যদি সবচে বাজে-লোকটার জন্য ন্যায়বিচারের জায়গা আমরা তৈরি করতে পারি, তাইলে ভালো-লোকদেরও পেরেশানি কম হবে… (যদিও আরো অনেক রিলিভেন্ট আলাপ হইতে পারে এইখানে, আমি জাস্ট পয়েন্ট’টা মেইক করাতেই থামতেছি) 

এখন কথা হইতেছে যে, কেমনে এই ইনসাফ আসবে, এবং থাকবে? এর প্রসেসটা কি হবে?

২. কোন পলিটিকাল সিসটেম বা শাসনের ধরনের ভিতর দিয়া আমরা ন্যাবিচারের সমাজ ও রাষ্ট্র বানাবো? 

এখন এইটা করার জন্য যেই পলিটিকাল সিসটেম লাগবে, সেইটা কি রকম হবে? কিভাবে ফাংশন করবে? 

সমস্যা হইলো, এইগুলা নিয়া লাখ লাখ হাজার হাজার ডকুমেন্ট আছে, অনেক ডাইবারসিফাইড আলাপ যে আছে – তা না, বরং কয়েকটা প্যাটার্নেরই ঘটনা, এতো সিমিলার জিনিস আছে যে, আলাদা করা-ই মুশকিল; আর এই কারনে  আইডিওলজিকাল ডিবেটগুলারে সেন্টার পয়েন্ট না কইরা এসেন্সের জায়গাটাতে ফোকাস করাটা বেটার…

আমার পজিশন হইতেছে যে, ভোটের ডেমোক্রেসি আমি চাই – লোকজন ভোট দিয়া নেতা ঠিক করুক, মোটামুটি সব লেভেলেই… কিনতু এখনকার যেই পার্লামেন্ট সিসটেম সেইখানে ব্যালেন্স অফ পাওয়ার নাই, মানে, ভোটরে বেইজ কইরা ডিটেইল ভাবা যাইতে পারে আরো

বিচারেও জুরি-সিসটেম থাকলে ভালো, দোষী কিনা সেইটা জুরিরা ঠিক করবে উকিলদের কথা শুইনা, বিচারক বা কাজী বা জাজের কাজ হবে কতটুক শাস্তি হবে – সেইটা ঠিক করা; মানে, অইখানেও ভোট এবং সোশাল কনশাসনেস থাকলে বেটার… সমাজের মানুশ যদি ন্যায়-বিচারে পার্টিসিপেট করতে পারে তাইলে ভালো হবে সেইটা

৩. ইকনোমিক পলিসি কী হবে আমাদের?

গরিবি না, বরং ইন-ইকুয়ালিটি হইতেছে মেইন সমস্যা, গরিবি হইতেছে সেইটার একটা রেজাল্ট; সমাজের মানুশ যদি না খাইয়া থাকে তাইলে জাস্টিস এনশিওর করতে পারবেন না আপনি; আর এইটা যখন নিয়ম হয়া উঠে তখন ইনসাফ কায়েম করা পসিবল না সমাজে; ঘটনাটা এতোটাই ক্রুশিয়াল; উইথ-আউট মিনিমাম লেভেলের একটা ইকুয়ালিটি, ইনসাফের সমাজ পাবো না আমরা আসলে

আর এই ইকুয়ালিটি জোর কইরা এস্টাবলিশ করা যায় না, কমিউনিটি ওনারশিপের ভিতর দিয়াও কিছু লোকের কাছে গিয়াই সবকিছু জমা হইতে থাকবে… যার ফলে আমি মনে করি সমাজে ব্যক্তি মালিকানা থাকতে হবে; ট্যাক্সেশন, গভর্মেন্ট ইনিশিয়েটিভ ও অন্য নিয়ম-কানুনের ভিতর দিয়া ইন-ইকুয়ালিটি লো-লেভেলে রাখার উপায় বাইর করতে পারলে বেটার…

৪. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, থাকা-খাওয়া… বা বেসিক নিডের জায়গাগুলা নিয়া

বেসিক নিডগুলা – তিনবেলা খাইতে-পারা, থাকার জায়গা, অসুখ হইলে চিকিৎসা, বেসিক এডুকেশন… – এই জিনিসগুলাতে সবার একসেস থাকতে হবে; এবং ঠিকঠাক মতো ফোকাস করা গেলে, কোন বেসিক নিড-ই আন-ফুলফিলড থাকার কথা না; একটা সাইসটেইনেবল সোসাইটির জন্য সমাজের সব মানুশের বেসিক নিডগুলা ফুলফিল করতে পারাটা জরুরি; সমাজ-সংগঠন এবং রাষ্ট্রিয় পলিসির ভিতর দিয়া এইটা করাটা পসিবলও আসলে… একটা ইন্ট্রিগ্রেটেট এপ্রোচের ভিতর দিয়া কেমনে করা যায় – সেই কাজগুলার বেপারেও একটা কনশাসনেস তৈরি করাটা দরকার

৫. অন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের লগে কেমনে মিলবো আমরা? 

কিছু কোর পয়েন্ট থাকতে হবে, যেইগুলার বেসিসে অন্য সমাজ ও রাষ্ট্রগুলার লগে রিলেশন তৈরি করবো আমরা; তবে সেইটা জাতিয়তাবাদ বা নেশনালিজম না হইলে ভালো, তাইলে বেইজটা কি হবে? সেইটা ঠিক করা লাগবে… 

এইখানে আমি রিজিওনাল কো-হেরিয়েন্সের পক্ষে, জিওগ্রাফিকাল লোকেশনের বেসিসে অনেকগুলা ইনডিপেনডেন্ট স্টেইটসের একটা ফর্মেশনের কথা ভাবা যাইতে পারে, রাষ্ট্রের soverginity’র যেই ধারনা সেইটারেও রি-ডিফাইন করাটা জরুরি আসলে

তো, টপিক হিসাবে আরো কিছু এরিয়া ও এজেন্ডা আসতে পারে, কিনতু ১০টার বেশি হইলে আলাপ আগানোটা মুশকিল হবে বইলা আমি মনে করি; তবে এই ১০-১২টা আলাপের ভিতরেই আরো অনেকগুলা সাব-টপিক এবং ডিটেইল জিনিসগুলা থাকা লাগবে… 

খ. তর্কগুলা কেমনে করবো আমরা? কতোদিনে করবো? ডিসিশান কেমনে হবে?

এইটা তো বড় একটা তর্কই হবে; যেইটা একটা নেশনাল ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ঘটতে পারাটা দরকার; সবগুলা পলিটিকাল পার্টির রিপ্রেজেন্টেশন জরুরি এইখানে, সমাজ সংগঠনগুলার, ইনটেলেকচুয়াল এবং মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি দেশের মানুশের; ৮-১০ জনের একটা কমিটি থাকলে ভালো, যাদের মডারেট করার অথরিটিরে সবাই মানবেন; তাদের আন্ডারে অনেকগুলা সাব-কমিটিও থাকতে পারে; গভর্মেন্ট ইনিশিয়েটিভ না হইলে সেইটা এফেক্টিভ হবে বইলা আমার কাজে মনেহয় না

কমিটিই তাদের কাজের আওতা ঠিক কইরা টাইম-লাইন ডিক্লেয়ার করতে পারে; তবে ৯০-১২০ দিনের মধ্যে শেষ করতে পারলে ভালো… আর কমিটিতে যেহেতু সবার রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে, তারাই অপশনগুলার ভিতর থিকা যাচাই-বাছাই কইরা ডিসিশানগুলা নিবেন; তাদের বিবেকের উপরে আমাদের ভরসা রাখতে হবে, যারা একটা কমন ডকুমেন্ট তৈরি করবেন

আর সেইটা গনভোটে পাশ করায়া নিতে পারলেই ভালো, মেজর চেইঞ্জ করতে হইলেও গনভোটে সেইটার ফয়সালা করাটা বেটার… 

গ. তো, ফাইনালি কি বলতে চাইতেছি আমি?

আমার কথাটারে যদি আমি সামারাইজ করতে চাই, তাইলে এইরকম একটা স্টেটমেন্ট হবে— ইনসাফ ও ইকুয়ালিটির ইনক্লুসিভ সমাজ ও রাষ্ট্র আমাদের বানানো দরকার, যেইখানে মানুশ তার ডিগনিটি নিয়া বাঁইচা থাকতে পারবে! 

আর এইটা ফিক্সড কোন ঘটনা না, বরং নানান ধরনের তর্কগুলারে একোমোডেড করার ভিতর দিয়াই, একটিভ রাখার ভিতর দিয়াই অই জায়গাটারে কনসটেন্টলি ক্রিয়েট করতে থাকতে হবে আমাদেরকে; কিনতু একইসাথে কমন একটা বেইজের জায়গা থিকাই এইটা ঘটতে থাকবে বইলা আমি মনে করি

Leave the first comment