জনবিতর্ক

মীর হাবীব আল মানজুর

আমরা কি শেষতক আমাদের খোয়াবের দুনিয়ার দেখা পাব?

September 24, 2024   0 comments   2:48 am

গত জুলাই ম্যাসাকারের পর থিকা আমি আমার বন্ধুদের বারবার বলতেসিলাম, হেফাজতের এতিম পোলাগুলা আর জামাতের রাজাকারগুলা মরসে ভাইবা, আমাদের এখানের জ্ঞানি ও মুর্খ মিডলক্লাস নরমাল ও ইন্টেলেকচুয়াল কেউ শক্তিশালী আওয়াজ উডায় নাই, কিন্তু এখন যখন দেখলো, নিজেদের সন্তানরাও শুরু করসে খুনি হাসিনার হাতে মরা, টনক নড়সে ভালোভাবে।

Share

উপরের লেখাটা লেখতেসিলাম প্রথম কারফিউর শেষের দিন। আমরা একটা খোয়াবের দুনিয়ার ভিতর ঢুইকা দেখতেসিলাম যেই স্বাধীনতা আসতে যাইতেসে, তার দিকে আমাদের সফরের কল্পনা।

কারফিউর সময় থিকা জুলাইয়ের ৩১ তারিখ পর্যন্ত প্রচন্ড একট চাপের ভিতর দিয়া যাওয়া লাগলো, সে সময় দোনোমোনা, কী হইতেসে, কেম্নে হইতেসে, কেম্নে হবে, আমাদের ধইরা নিয়া যাওয়া হবে কি না, এসব দুশ্চিন্তা ও মাঠের এক্টিভিটিরে একসাথে কইরা যাইতেসিলাম। 

খুব এতমিনান হইতেসিল, জালেম নামবে। জালেম যদি নামে, সেই পরিবর্তনের ঘটনা কেম্নে ঘটতে পারে, তার আইনি ও ভিজ্যুয়াল এক্টিভিটিগুলা কিভাবে ঘটবে, এগুলা নিয়া নানান চিন্তা হইতেসিল। .

কবিতার জায়গা থেকে একটা দুনিয়ারে ভাবসি। একটা বড় ঘর, সেইটা আমাদের খোয়াব থিকা আসা। একেকটা খুটি ইনসাফের অনেক রকমের ফিকিরের কোশেশ ধইরা আসছে। এমন ভাশিক আর্কিটেকচারের দিকে যাওয়া দরকার, যেইটা পলিটিক্যাল কমিউনিটিরে ফিউচারের দুনিয়ার ব্যাপারে আগে থিকা খোচানো শুরু করবে। ভাশার ভিতর দিয়া সুই তৈয়ার করা হবে, ইনসানিয়াতের বাইরে কোনো কদম ত দেয়া যাবে না, অই যে রাখা আছে নতুন সময়ের ভাশাগত আলোয়ান, অখানে রাইখা দেয়া সুই খোচানো শুরু করবে।

ফিকশান বা কবিতার আইডিয়াগুলারে এত এবস্ট্রাক্ট করতে চাওয়া উচিত না, এগুলা পরিশকার থাকবে, বাট আইডিয়া নিজেই ত একটা গোপন সিন্দুক, কিন্তু এটা যেন ক্লিয়ার থাকে।

সোসাইটি, কালচার, পলিটিক্স, রিলিজিওন নিয়া আমাদের পড়াশোনা অনেক কম। ফলত ফিলোসফিক্যাল এসেন্সগুলা নিয়া আমাদের কাজ আর আগায় না। 

বাংলাদেশের একাডেমিগুলায় সাইন্সের বেসিক যেমন অত্যাবশ্যক করা দরকার, তেমন সোশাল সাইন্সের বেসিক তৈয়ারের জন্য একট ভালো সিলেবাস খুব জরুরি। 

সত্য কীভাবে ঘটে, কিভাবে আমাদের সামনে সত্য হয়া ওঠে, আরো নানান সত্যের ভিতর কখন কোন সত্যটা আমরা গ্রহণ করি, করতে চাই, এগুলার ভিতর দিয়া আমাদের মানুশ হিসাবে স্বজ্ঞা ও প্রজ্ঞার যে ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি তৈয়ার করা লাগবে, তার প্রাইমারি কদম আমরা সামনের মানুশদের এভাবে দেখাইতে পারব।

গত জুলাই ম্যাসাকারের পর থিকা আমি আমার বন্ধুদের বারবার বলতেসিলাম, হেফাজতের এতিম পোলাগুলা আর জামাতের রাজাকারগুলা মরসে ভাইবা, আমাদের এখানের জ্ঞানি ও মুর্খ মিডলক্লাস নরমাল ও ইন্টেলেকচুয়াল কেউ শক্তিশালী আওয়াজ উডায় নাই, কিন্তু এখন যখন দেখলো, নিজেদের সন্তানরাও শুরু করসে খুনি হাসিনার হাতে মরা, টনক নড়সে ভালোভাবে।

৫ অগাস্টের পর গত ১৫ বছরের যত জইমা থাকা কথাগুলা বলা শুরু করলো। কত অন্যায় হইসে, আইন কেম্নে ইউজ হইসে, এগুলা নিয়া বললো যার যার অভিজ্ঞতা, কিন্তু কেউ একটা বিষয়ে কথা কইতে যেনবা আগ্রহি না যে, যুদ্ধপরাধ ইস্যুতে যেই বিচার হইসে, এইগুলা যে আসলে বিচারিক হত্যাকান্ডের বাইরে তেমন কিছু ঘটে নাই। 

প্রগতিশীল, লিবারাল সবাই যেনবা একমত রাজাকার বইলা যাদের মারা হইসে, যারে যেইভাবে ট্যাগ দিয়া ধরা হইসে, এই ব্যাপারে কিছু বলার নাই, এদের শাস্তি এইভাবেই হয়া উচিত।  

ইনসাফ! তাইলে ইনসাফ ভাই কই? আমরা যে একাত্ম হয়া আগের ফেসিস্টদের সব ভাইঙা দিতে চাইতেসি, যাতে কোনোকিছুর নাম কইরা আমাদের উপর খবরদারি, রোষানল, হত্যা, পিড়নের লাইসেন্স না কেউ না পায়, সেইটা কীভাবে হাসিল করব? 

আমরা না নেরেটিভ বানাব? আমরা না ইনসাফের দুনিয়া গড়ব? কই সেগুলা? কিভাবে হবে সেগুলা? অল্প থিকা অল্পের ভিতরই আমাদের আগের অভ্যাস, আচরন যদি ফিরা আসে, তাইলে কেম্নে সত্য কম্পেরেটিভ পলিটিক্যাল লিটারেচার তৈয়ার করব? .

শৈশব ও প্রথম কৈশোরে প্রচুর পত্রিকা, ইরাক আফগান যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইজরায়েলি হামলা, মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড ও ইসলাম মানা ফ্যামিলির থিকা আসার কারণে যিহাদ আমার কাছে একটা দুর্দান্ত আকর্ষণের বিষয় আছিল। ১২/১৩ বছর বয়সে আমি চাইতাম সাইন্স নিয়া পইড়া ফিজিক্স কেমিস্ট্রির বড় কিছু হমু, কারণ এইটা জানলে বোমা বানানো যাবে, সেই বোমা ও অসরো দিয়া যিহাদ করা যাবে আমেরিকা ও ইউরোপের সাথে৷ এত ছোট বয়সে ওসানা বিন লাদেন, আয়মান আল জাওয়াহিরি, আনওয়ার আল আওলাকি, আব্দুল্লাহ আযযাম আর আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়া জানার চেষ্টা করসিলাম যে, আমি যখন তের চৌদ্দ বছর বয়সে কিতাবখানার ফার্স্ট ইয়ারে তাইসিরে ভর্তি হই কোরান হেফজো শেষে, আমার মেঝ ভাই আমার কেতাব মলাট কইরা উপরে আমার নাম লেইখা সাথে লেইখা দিসিল আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ। 

সেই সময়, সে উত্তেজনা কই কই যে চইলা গেসে, সেগুলা আর ধরা যায় না।

অই সময়টায় আব্দুল্লাহ আয যামের কয়েকটা বই পড়সিলাম আব্দুস সাত্তার আইনীর তরজমায়। অইখানে একটা বইয়ে মেবি ফিলিস্তিনের স্মৃতি কিংবা সিরাতের শিক্ষায় আযযাম বলতেসিলেন, একটা দীর্ঘ সশসরো সংগ্রামের ভিতর দিয়া সমাজ ও রাশটো গঠন করতে না পারলে কোনো ফলদায়ক কাজ হওয়া সম্ভব না। আমার তখনই অইটা খুব ভালোভাবে মনে গাইড়া গেসিল। 

গত ১৭ বছর একক রাজত্বের যে জুলুম আমরা সইসি, তার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো সামগ্রিক সংগ্রাম ছিল না অই অর্থে। নানান গ্রুপ, শ্রেনি কিংবা দলগুলা আলাদা আলাদা সংগ্রাম করসে, জলসে পুড়সে মরসে। ১৫ জুলাইয়ের পর থিকা ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা এমন এক মুভমেন্টে একত্র হইসি, যেটা সবার কন্ট্রিবিউশানে এমন রুপ পাইসে, আমাদের খোয়াব একটা নতুন দেশ, সমাজ, রাশটো কাঠামোর ভিতর হাবুডুবু খাইসে৷ কিন্তু যেইই সময়টা শেষ হয়া গেল, আমাদের বিভেদগুলা উসকায়া উঠলো। আমরা আমাদের যে সমস্ত কাজ করা উচিত ছিল, সেইগুলারে দিকে মনোযোগ হারায়া ছোট ছোট সব জিনিসে পাওয়ার ধ্বংস করা শুরু করলাম।

জুলাই গণপরিসরে দেয়া বক্তব্যে মাহফুজ আব্দুল্লাহ কইতেসিলেন, আমাদের গনঅভ্যুত্থান পুনরমঞ্চায়ন করতে থাকতে না পারলে আমরা আসলে তেমন কোনো ফায়দাই উঠাইতে পারব না। 

এখন তেমন লাগতেসে না? গনঅভ্যুত্থান যেই না শেষ, আমাদের শক্তি হাজার বিভক্ত হয়া কই কই যেন লাইগা যাইতেসে। আমাদের মুল যে বিষয়, নতুন খোয়াবের রাশটো গঠন, সমাজ তৈয়ার করা, প্রতিষ্ঠানগুলারে ইনসাফের দোকান বানানির কাজগুলা আমাদের হাত থিকা ছুইটা যাইতেসে না?

আমাদের আসলে একটা লম্বা সংগ্রাম দরকার আছে, যেই সংগ্রামের ভিতর থাকতে থাকতেই সবকিছু তৈয়ারের মিনিমাম খসড়াটা বানায়া ফেলতে পারব।

‘আমি নাচব,

যেভাবে পাথর মেরে নাচে ফিলিস্তিনের সৌরছেলেরা

আমি কবিতা লেখব,

যেভাবে মহান কবিরা শায়েরির ভিতর ধিমধিমে আগুন উসকে দিসিলেন,

আমি বারবার বলব, নতুন দেশ ও আজাদি পেতে এক দীর্ঘ বিপ্লবের কথা কোনোদিন ভোলা যাবে না’

৫ আগস্টের পর থেকে আমি অনেক বিষয়ে নোক্তা দেয়ার চেষ্টা করলাম। অন্তর্বর্তিকালিন সরকারের বৈধতা, নতুন গঠনতন্ত্র প্রনয়ন, হিন্দুদের উপর হামলা, শহিদ ও আহতদের পুনর্বাসন, ফেসিস্টদের বিচার, অর্থনৈতিক কাঠামোগুলা পুনরুদ্ধার, মাজারে হামলা, রাশটের সকল জায়গায় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তসহ পুরা দেশটা যেন খোয়াবের দুনিয়া হিসাবে তৈয়ার করা যায়, এ নিয়া মানুশ যেন কথা বলে, তার উত্তেজক হিসাবে আমাদের এক্টিভিজম।

আমি অনেক মানুশরে বললাম, আমরা যে একদম নতুন সবকিছু না হইলেও মিনিমাম সংস্কার চাইতেসি, সেটার ৪০%ও না পাই, তাহলে একটা গনহতাশা তৈয়ার হইতে পারে ইয়াংদের ভিতর। একইসাথে ফেসিস্টদের পুনর্বাসন ও আগের কার্যকলাপের সিলসিলা এমন এক জায়গায় নিয়া যাবে, যা আমাদের গনঅভ্যুত্থানের স্পিরিটরে দুমড়ায়া মুচড়ায়া আরো পিছনের দিকে ফিরা যাইতে বাধ্য করবে। 

আমি যেহেতু কবি, আমি আশাবাদ ও খোয়াবরে সামনের রাইখা আগাইতে চাই, সাথে আল্লার প্রতি বান্দার নজর–আশা ও ভয়ের মাঝামাঝি থাকা, এইটারে ফিলোসফিক্যালি স্টাবলিশ করতে চাই। আমরা হতাশ হবো না, যদি না হয় কিছু, আমরা উদ্যম ধইরা রাখব। আমরা পারব না হয়ত, আবার মেহনত করব, কিছু ঠিক হবে, আবার পুনরমঞ্চায়ন করব আমাদের যা আছে সবকিছু নিয়া, একদিন না একদিন আমরা আমাদের খোয়াবের দুনিয়ারে সত্য করব।

Leave the first comment